
স্টারলিংক বাংলাদেশে, গ্রামের ঘরেও এখন হাই-স্পিড ইন্টারনেট

বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে ইলন মাস্কের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা "স্টারলিংক"। কিন্তু এর খরচ, ব্যবহার, সীমাবদ্ধতা, উদ্যোক্তাদের জন্য সম্ভাবনা, সব মিলিয়ে মানুষের মনে অনেক প্রশ্ন। চলেন, সহজ ভাষায় ক্লিয়ার করি সব কিছু।
ডেটা লিমিট আছে নাকি?
নেই, পুরোটাই আনলিমিটেড।
স্টারলিংকে আপনি যত খুশি, যত ইচ্ছা ডেটা ব্যবহার করতে পারবেন, কোনো লিমিট নেই বলেই সরকার নিশ্চিত করেছে।
কারা ব্যবহার করতে পারবে এই ইন্টারনেট?
সবার জন্য, বিশেষ করে যাদের এলাকায় এখনও ফাইবার নাই।
পার্বত্য এলাকা, হাওর, বন বা যেসব জায়গায় এখনো ফাইবার অপটিক পৌঁছায়নি, সেখানেই স্টারলিংক বেশি কাজে আসবে। আপনি দেশের যেকোনো প্রান্তে থাকলেও, এটা ব্যবহার করতে পারবেন।
স্পিড কেমন পাবো?
ঢাকার স্পিড গ্রামের ঘরেও!
বলা হচ্ছে, সংসদ ভবন বা মন্ত্রীদের অফিসে যেভাবে স্পিড পাওয়া যায়, সেই একই গতি স্টারলিংকে দেশের যেকোনো জায়গায় পাওয়া যাবে।
খরচ কত পড়বে?
মাসিক ৪২০০ থেকে ৬০০০ টাকা, একবারেই ৪৭ হাজার টাকার যন্ত্রপাতি।
স্টারলিংকের দুইটা প্যাকেজ, "রেসিডেন্স" এবং "রেসিডেন্স লাইট"। মাসিক খরচ ৬০০০ টাকা বা ৪২০০ টাকা। আর যন্ত্রপাতির খরচ একবারেই ৪৭ হাজার টাকা।
দাম তো একটু বেশি, সবাই কি পারবে?
বন্ধুরা মিলে শেয়ার করে চালানো যাবে।
একজনের পক্ষে খরচ সামলানো কঠিন হলে, কয়েকজন মিলে একটি সেট-আপ বক্স কিনে সবাই মিলে ইউজ করতে পারবেন। এর WiFi রেঞ্জ প্রায় ২০ থেকে ৫০ মিটার পর্যন্ত। মানে পাড়ার কয়েকটা দোকান বা কয়েকজন উদ্যোক্তা মিলে চালানো সম্ভব।
উদ্যোক্তারা কীভাবে উপকৃত হতে পারে?
একটা নতুন ইনকামের রাস্তা খুলে যেতে পারে।
স্টারলিংক দিয়ে একটা WiFi লেডি বা ফোন লেডি টাইপ মডেল গড়ে তোলা সম্ভব, গ্রামীণ নারীরা এই ইন্টারনেট বিক্রি করে আয় করতে পারেন। ব্যাংক বা এনজিও থেকেও লোন নিয়ে এই বক্স কেনা যাবে। সরকার নাকি ফাইন্যান্সিয়াল প্যাকেজও আনতে যাচ্ছে।
ব্যবসা করার অনুমতি আছে তো?
হ্যাঁ, শেয়ার করেও চালাতে পারবেন, আইনগত বাধা নাই।
স্টারলিংক দিয়ে যদি আপনি লোকালিতে WiFi শেয়ার করেন বা নিজের ISP সেটআপ করেন, কোনো সমস্যা নেই। সরকার এটা নিয়ে কোনো বিধিনিষেধ দেয়নি।
জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে কোনো রিস্ক আছে?
না, সব কিছু লোকাল গেটওয়ের মাধ্যমে চলবে।
স্টারলিংক কোম্পানিকে ৯০ দিনের মধ্যে লোকাল গেটওয়ে সেটআপ করতে বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে তথ্য নিয়ন্ত্রণে থাকবে, তাই সার্বভৌমত্ব বা নিরাপত্তা নিয়ে ভয় নেই।
চীন-মার্কিন দ্বন্দ্বের মাঝে সমস্যা হবে না তো?
বাংলাদেশ সবার সঙ্গে ব্যবসা করতে চায়, নিরপেক্ষভাবে।
বাংলাদেশে এখনো অনেক কিছু চীনা প্রযুক্তির মাধ্যমে চলে। সরকার বলছে, মার্কিন হোক বা চীনা, যেই আসুক, যদি জাতীয় স্বার্থ ঠিক থাকে, তাহলে ব্যবসার সুযোগ পাবেই।
বাসায় ফ্ল্যাট শেয়ার করলে সুবিধা হবে?
একই বিল্ডিংয়ের কয়েকজন মিলে চালালে খরচ পড়ে কম।
যদি এক বিল্ডিংয়ে কয়েকটা ফ্ল্যাট মিলে চালান, তাহলে ইনভেস্টমেন্টটা সহজ হবে। খরচ ভাগ হয়ে গেলে বিষয়টা সহজ হয়ে যায়।
বাংলাদেশে খরচটা বেশি না কম?
কমই বলা যায়, তুলনায় সবচেয়ে সস্তা।
সরকার বলছে, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা থেকেও কম দামে স্টারলিংক বাংলাদেশে পাওয়া যাবে। তাই রিজিওনাল প্রাইসিং হিসেবে, এটা সাশ্রয়ী।
সরকারি কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে না তো?
না, তাদের স্বার্থও সংরক্ষিত থাকবে।
সরকার বলছে, সাবমেরিন কেবল ও স্যাটেলাইট কোম্পানির মাধ্যমেই সরকারি স্বার্থ রক্ষা করা হবে।
গ্রামের ছেলেটা এখন যদি হাই-স্পিড ইন্টারনেট পায়, তাহলে সে শুধু Netflix দেখবে না, Shopify খুলে প্রডাক্ট বিক্রি করতেও পারে। স্টারলিংক শুধু ইন্টারনেট না, এটা হতে পারে বাংলাদেশের ডামাডোল মার্কেটের নতুন ব্রিজ।